কোন বিষয়গুলো দেখে গুগল ওয়েবসাইটে এডসেন্স অ্যাপ্রভাল দেয়
প্রিয় পাঠক, আপনি কি আপনার ওয়েবসাইট গুগলের মাধ্যমে মনিটাইজেশন নিয়ে ইনকাম করতে চান? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন কোন বিষয়গুলো দেখে গুগল ওয়েবসাইটে এডসেন্স অ্যাপ্রভাল দেয়। তাই ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করতে গেলে আপনাকে গুগল এডসেন্স অ্যাপ্রভাল নিতে হবে।
এই গুগল এডসেন্স ব্যতীত আর অন্যান্য অনেক এড নেটওয়ার্ক রয়েছে যেগুলো থেকেও আপনি মনিটাইজেশন নিতে পারেন। তবে সব থেকে বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য এড নেটওয়ার্ক হলো গুগল এডসেন্স। তাই আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থেকে হোক সেটা ব্লগার, ওয়ার্ডপ্রেস কিংবা কোডিং এর ওয়েবসাইট। আপনার ওয়েবসাইটের সব কিছু যদি গুগল এডসেন্সের নিয়ম অনুসরণ করে তাহলে আপনি অনুমোদন পেয়ে যাবেন।
কোন বিষয়গুলো দেখে গুগল ওয়েবসাইটে এডসেন্স অ্যাপ্রভাল দেয়
আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটে এডসেন্স অ্যাপ্রভাল নিয়ে ইনকাম করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রতিধারি করতে হবে। গুগলের বেশকিছু অ্যালগরিদম রয়েছে যেগুলোর উপর ভিত্তি করে তারা বিজ্ঞাপনের অনুমোদন দিয়ে থাকে। তো সিরিয়াল অনুসারে নিচে বেশ কয়েকটি পয়েন্ট আলোচনা করা হলো আপনি যদি এডসেন্স অনুমোদন পেতে চান তাহলে নিম্নের প্রত্যেকটি বিষয় পরিপূর্ণ ভাবে পালন করতে হবে।
ওয়েবসাইটের কনটেন্ট
যেকোন ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট হলো সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর উপরে নির্ভর করে সবকিছুর বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। আপনি যখন যেকোন একটি আর্টিকেল কিংবা পোস্ট গুগল ইনডেক্স করাবেন তখন গুগলের চ্যাট বট আপনার পোস্টটি মানুষের মতো করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বে এবং পর্যবেক্ষণ করবে।
তাই আপনি যদি আপনার কন্টেন্টে কোন প্রকার ঝামেলায় রাখেন তাহলে কখনোই এডসেন্সের জন্য অনুমোদন পাবেন না। আপনি যদি কনটেন্ট বিষয়ে কোন প্রকার ঝামেলা না করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ইউনিক এবং মানসম্মত কনটেন্ট প্রকাশ করতে হবে।
অনেকে অন্যের লেখা আর্টিকেল শুধুমাত্র একটি ঘুড়িয়ে পেচিয়ে লিখে দেয় যেটা কোন ভাবেই উচিত নয়। আপনি যে কনটেন্ট প্রকাশ করবেন সেটা সম্পূর্ণরূপে আপনার লেখা হতে হবে এবং এমনভাবে লিখবেন যাতে ইতিপূর্বে ওইভাবে কেউ লেখেনি কিংবা ওই সকল তথ্য কেউ প্রদান করেনি।
আর ইমেজ এর ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন কারণ আপনি যদি কপিরাইট যুক্ত ইমেজ ব্যবহার করেন তাহলে কখনোই অনুমোদন পাবেন না। এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে কপিরাইট ফ্রি ইমেজ পাওয়া যায় সেখান থেকে আপনি ডাউনলোড করে নিবেন।
আর সবথেকে ভালো হয় কপিরাইট মুক্ত ইমেজ ডাউনলোড করে সেটাকে আবার বিভিন্ন রকম এডিট এবং মডিফাই করা। আপনি চাইলে ক্যানভা কিংবা ফটোশপ দিয়ে পিকচারগুলো খুব সুন্দরভাবে তৈরি করতে পারবেন। তাই নিজস্ব একটি ব্র্যান্ড তৈরি করতে কিংবা নিজের ওয়েবসাইটের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী ইমেজ তৈরি করতে আপনাকে অবশ্যই একটি ক্যাটালগ তৈরি করতে হবে। আর এই ক্যাটালগে আপনি যদি প্রতিটি ইমেজ তৈরি করে থাকেন তাহলে আপনার একটি আলাদা পরিচিতি তৈরী হবে।
আর কনটেন্টের মধ্যে আপনি যে লেখাগুলো রাখবেন সেগুলো অবশ্যই ৮০০ থেকে ১০০০ ওয়ার্ডের মধ্যে হতে হবে। অনেকে তিন চারশো ওয়ার্ডের আর্টিকেল লিখে প্রকাশ করে পরবর্তীতে যখন গুগল এডসেন্সের জন্য আবেদন করে তখন অনুমোদন পায় না। তাই আপনি যদি আগে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করে পোস্টগুলো একটু বড় ভাবে লেখেন তাহলে এডসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনাকে অবশ্যই এমন ভাবে লিখতে হবে যাতে লেখার মধ্যে কোন প্রকার ভুল না থাকে। বর্তমানে এই ভয়েস টাইপিং এর কারণে ব্যাকরণগত ও বানানগত অনেক রকম ভুল থেকে যায়। তাই আপনি যদি ভয়েস টাইপিং করে থাকেন তাহলে লেখার পরে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি একবার রিভিশন দেবেন তাহলে আর ভুল থাকবে না এবং পাঠকদের পড়তে এবং বুঝতে অনেক সহজ হবে।
গুগল এডসেন্স পলিসি
গুগল এডসেন্স নেটওয়ার্কের একটি আলাদা নিয়ম নীতি রয়েছে যেটাকে পলিসি বলা হয়ে থাকে। তাদের এই পলিসের মধ্যে বেশ কিছু নিয়ম নীতি রয়েছে যেটা আপনাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। আপনি যদি এই নিয়মগুলো পরিপূর্ণভাবে না অনুসরণ করেন তাহলে আপনার ওয়েবসাইট কখনোই এডসেন্সের জন্য অনুমোদন পাবে না।
এসব নিয়মিতদের মধ্যে রয়েছে আপনি কখনোই অশ্লীল, অবৈধ, হিংসাত্মক, নৈতিক, দেশদ্রোহী কন্টেন্ট প্রকাশ করতে পারবেন না। এমন অনেক সময় হয় যে এডসেন্স অনুমোদনের পরে যদি কেউ এ ধরনের কন্টেন্ট প্রকাশ করে থাকে তাহলে তার এডসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয়। তাই আপনি যদি দীর্ঘদিন যাবৎ এডসেন্স থেকে ইনকাম করতে চান এবং এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে দাড় করাতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই এই সকল বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ওয়েবসাইটের ডিজাইন এবং লেআউট
আপনাকে এমন ভাবে ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে হবে যাতে ভিজিটর ওয়েবসাইটে খুব সহজে প্রবেশ করতে পারে এবং তাদের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো ক্যাটাগরি অনুসারে পেয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে এরকম হয়ে যায় আপনি কটি নির্দিষ্ট কি ওয়ার্ডের জন্য র্যাঙ্ক এ রয়েছেন কিন্তু ভিতরে যে তথ্যগুলো দিয়েছেন সেগুলো অগোছালোভাবে রয়েছে।
আবার অনেক সময় অনেকেই ওয়েবসাইটের ডিজাইন এমনভাবে করে যে পাঠক বুঝতে পারে না কোথায় গিয়ে তথ্য পড়তে হবে। তাই এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যাতে সেটি ইউজার ফ্রেন্ডলি হয়।
তাই আপনি যদি নিজে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ডিজাইন করতে না পারেন তাহলে যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ রয়েছে তাদের দিয়ে কাজটি করে নিতে পারেন। তবে সবথেকে ভালো হয় নিজের কাজ নিজেই করে নেওয়া, তাই আপনি না পারলেও জিনিসটা শিখে নেবেন এবং নিজের মন মত ডিজাইন করবেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড। ওয়েবসাইটের স্পিড যদি ভালো না হয় আর ইউজার যদি এতে ঢুকে বিরক্ত কর বোধ করে তাহলে আপনি কখনোই গুগল এডসেন্সের জন্য অনুমোদন পাবেন না। তাই আপনার ওয়েবসাইটটি অবশ্যই মোবাইল রেসপন্স এবং ফাস্ট লোডিং হতে হবে।
কয়েকটি বাধ্যতামূলক পেজ
আপনি যদি গুগল এডসেন্স এর জন্য আবেদন করে থাকেন তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য অবশ্যই চারটি পেজ ক্রিয়েট করে নিতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ About US, Contract US, Privacy Policy, Terms & Condition, Disclaimer। এগুলো আপনার নিজের হাতে লিখবেন এবং নিজের তথ্যগুলো খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করবেন।
ডোমেইন এর বয়স
যেহেতু ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন ব্যবহার করা লাগে তাই এই ডোমেইন এর বয়স অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ ক্ষেত্রে দুই থেকে চার মাস বয়স হলে খুব সহজেই এডসেন্স পাওয়া যায়। তাই আপনার ডোমেইন যদি একদম নতুন হয়ে থাকে তাহলে দুই থেকে চার মাস অপেক্ষা করুন।
ওয়েবসাইটের ট্রাফিক
অনেকেই বলে ট্রাফিক কোন ম্যাটার নয়, কিন্তু এই কথাটি পরিপূর্ণভাবে সঠিক নয়। আপনার ওয়েবসাইটে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্গানিক ট্রাফিক না থাকে তাহলে এডসেন্স পেতে অনেক সমস্যা দেখা দেবে। সাধারণত ওয়েবসাইটে যদি প্রতিদিন ১০০টি অর্গানিক ট্রাফিক আসে তাহলে কিন্তু খুব সহজে অনুমোদন পাওয়া যায়।
ব্রোকেন লিংক
ওয়েবসাইটে যদি 404 পেজ বা ব্রোকেন লিংক পাওয়া যায় তাহলে কিন্তু কখনোই আপনি এডসেন্স এর অনুমোদন পাবেন না। তাই এডসেন্স এর জন্য এপ্লাই করার পূর্বে গুগল এগিয়ে broken link checker লিখে সার্চ দিবেন, এবং যেকোনো একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেখে নেবেন যে আপনার সাইটে কোন ব্রোকেন লিংক রয়েছে কিনা। যদি এই ধরনের কোন লিংক থেকে থাকে তাহলে সেগুলো অবশ্যই রিমুভ করে দেবেন।
অনেক ক্ষেত্রে এরকম হয় যে একটি পোস্টের লিঙ্ক অন্যান্য পোষ্টের মধ্যেও ইন্টার্নাল লিংক হিসেবে দেওয়া থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে যদি আপনি ওই পোস্টের পারমালিঙ্ক পরিবর্তন করে দেন তাহলে ইন্টার্নাল লিংকটি কিন্তু ব্রোকেন হয়ে গেল। তাই যদি কোন পোষ্টের পারমালিঙ্ক পরিবর্তন করে থাকে তাহলে ওই পোস্টটি যতগুলো পোষ্টের মধ্যে রয়েছে সবগুলোর ইউআরএল চেঞ্জ করে দেবেন।
যে বিষয়গুলো নিয়ে লিখলে দ্রুত এডসেন্স পাওয়া যায়
আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য দ্রুত এডসেন্স অ্যাপ্রভাল জানতে হলে আপনাকে যেকোনো একটি নিস নিয়ে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে আপনি যদি টেকনোলজি, অটোমোবাইল, ব্যবসা, ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং এ সকল বিষয়ে আর্টিকেল লিখে থাকেন এবং এগুলোর উপর ভিত্তি করে যদি প্রতিদিন ১০০টির মত ভিজিটর নিয়ে আসতে পারেন তাহলে কিন্তু এডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শেষ কথা
আশা করি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি পরে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে আসলে কোন বিষয়গুলো দেখে গুগল এডসেন্স অ্যাপ্রভাল দেয়। তাই আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটে এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে চান তাহলে উপরোক্ত বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url